+

এসএসসি মামলায় হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়, অবশেষে সম্পূর্ণ হল বৃত্তটা!

এসএসসি মামলায় হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়, অবশেষে সম্পূর্ণ হল বৃত্তটা!

 নিজস্ব প্রতিনিধি: এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সোমবার কলকাতা হাইকোর্ট যে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে তা নিয়ে রাজ্য তথা দেশ জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এমন নজিরবিহীন রায় যে আসতে চলেছে সেটা অনেকেই হয়ত ভাবতে পারেননি।

উপযুক্ত বিচারের স্বার্থে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একরোখা মনোভাব ও একের পর এক কড়া সিদ্ধান্তের জেরে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নয়া মোড় এসেছিল। নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে সমস্ত পর্যবেক্ষণ শুনিয়েছেন, বা পরবর্তীকালে যা যা নির্দেশ দিয়েছেন, তা সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মান্যতা পেয়েছে। নিঃসন্দেহে বলা যায় এদিন সেই বৃত্তটা সম্পূর্ণ হল। এজলাসে থাকা অবস্থায় একের পর এক নির্দেশ ও গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ শুনিয়েছিলেন অভিজিৎ। ঘটনা হল ২০২১ সালে এসএসসি মামলা গিয়েছিল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসের। সেই বছরের ২২ নভেম্বর নিয়োগ মামলায় প্রথম সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। এরপর যতদিন গিয়েছে একের পর এক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন অভিজিৎ। নবম-দশম থেকে একাদশ-দ্বাদশ, সব ক্ষেত্রেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে এজলাসে বসে একদিন ক্ষোভের সঙ্গে বলতে শোনা গিয়েছিল,  "ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব!

উল্লেখ্য নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে একের পর এক চাঞ্চল্যকর নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিজিৎ। যেমন এসএসসির তৎকালীন উপদেষ্টা কমিটির প্রধান শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে রাত বারোটার মধ্যে সিবিআই যাতে তলব করে সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সিবিআই দফতরে একদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির মামলায় প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ চন্দ্র অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই সূত্রে সিবিআই দফতরে কন্যাকে নিয়ে রাত আটটার মধ্যে পরেশকে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিজিৎ। এমনকী চাকরিও চলে যায় তাঁর কন্যার। সুদ-সহ বেতন ফেরত দিতে হয় অঙ্কিতাকে।

নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার সূত্রে এক নির্দেশে তিনি জানিয়েছিলেন, রাত বারোটার মধ্যে এসএসসি দফতর ঘিরে ফেলতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। এমন বহু নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যা নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়ে যায়। তাঁর নির্দেশের জন্যেই প্রকাশ্যে আসে ওএমআর শিট কেলেঙ্কারি। দেখা যায় বহু চাকরিপ্রার্থী সাদা খাতা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন। এমনকী কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থীর চাকরি বাতিলেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি। এগুলি কয়েকটি উদাহরণ মাত্র।

এরকম বহু নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি যাতে তীব্র অস্বস্তিতে পড়ে শাসক দল তৃণমূল। যদিও পরবর্তীকালে নিয়োগ মামলার শুনানি থেকে সরে যেতে হয় অভিজিৎকে। আর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে একটা সময়ে কলকাতা হাইকোর্টে  নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠিত হয়। সেই বেঞ্চ ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে সোমবার। এতেই স্পষ্ট তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে সমস্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন তা একশো ভাগ সঠিক ছিল। তখন শাসক দল সেই সমস্ত নির্দেশের তীব্র বিরোধিতা করেছিল। রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে অভিজিৎ সেই সমস্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে বহুবার অভিযোগ করেছে তৃণমূল। তখন অবশ্য পুরো বৃত্তটা সম্পূর্ণ করতে পারেননি অভিজিৎ। কারণ চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগেই তাঁকে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক মামলা থেকে সরে যেতে হয়েছিল। আর নির্ধারিত সময়ের আগেই বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়ে গত মার্চে বিজেপিতে যোগদান করে তমলুক লোকসভায় প্রার্থী হয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

স্বাভাবিকভাবেই কলকাতা হাইকোর্ট এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলা নিয়ে কী রায় দেয় তা শোনার জন্য উদগ্রীব হয়েছিলেন অভিজিৎ। অবশেষে হাইকোর্টের রায় সবদিক থেকে নিঃসন্দেহে স্বস্তি দিয়েছে অভিজিৎকে। তৃপ্ত করেছে তাঁকে। এই রায় প্রমাণ করেছে বিচারপতি থাকাকালীন যে সমস্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন অভিজিৎ তাতে কোনও ভুল ছিল না। সবমিলিয়ে লোকসভা নির্বাচনের আবহের মধ্যে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বৃত্তটা সম্পূর্ণ হল।

facebook twitter